পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায়: বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার আধুনিক সমাজের মানুষের জীবনে এনেছে নানা পরিবর্তন, বৈচিত্র্য। পাল্টে দিয়েছে জীবনযাপনের মান ও ধরন। সরকার ও জনগণের উপর এ প্রভাব পড়েছে ব্যাপকমাত্রায়। আর ই-গভর্নেন্স হলো তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে সরকারি সেবার একটি নতুন রূপ। বর্তমান বিশ্বে ই-গভর্নেন্স একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ই-গভর্নেন্সের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই সংগত কারণেই “ই-গভর্নেন্স” রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার একটি পাইলট প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে এসআইসিটি (Support to ICT Task Force)। এ অধ্যায়ে ই-গভর্নেন্সের ধারণা, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, ই-গভর্নেন্সের সুবিধা বা প্রয়োজনীয়তা, ই-গভর্নেন্সের প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের উপায় আলোচনা করা হয়েছে।
উত্তর: ই-গভর্নেন্স বলতে এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সেবা ও তথ্য জনগণ অতি সহজে তাৎক্ষণিকভাবে পেতে পারে। ই-গভর্নেন্স সরকারি তথ্য ভান্ডারের সাথে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করে। এ ব্যবস্থায় তথ্য আদান-প্রদান কেবল সরকার ও নাগরিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সরকারের সাথে ব্যবসায় এবং সরকারের সাথে সরকারের তথ্য ও সেবা আদান-প্রদানের ব্যবস্থাও থাকে।
উত্তর: ইন্টারনেট হলো পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য কম্পিউটারের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিরাট নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। একে ইন্টারনেট ওয়ার্কিং বলা হয়। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস-এর UCLA ল্যাবরেটরিতে ইন্টারনেটের সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু হয়।
ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন ডিভাইসের মধ্যে- ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, নোটবুক, ট্যাব, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাধারণত ইন্টারনেটে ব্রাউজিং করার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, ফায়ারফক্স, অপেরা, গুগল ইত্যাদি ব্রাউজার ব্যবহৃত হয়। ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী মানুষকে ফলপ্রসূভাবে এবং সুলভে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম করেছে।
উত্তর: ল্যাপটক হলো বহনযোগ্য ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং ভ্রমণ উপযোগী। একটি ল্যাপটপ কম্পিউটারে ডেস্কটপ কম্পিউটারের সমস্ত উপাদান এবং সকল ইনপুট যন্ত্রগুলোকে একত্রিত করা হয়, যেখানে শুধু একটি যন্ত্রে মনিটর, স্পিকার, কী-বোর্ড এবং টাচপ্যাড দৃশ্যমান থাকে। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা এবং বিনোদনসহ বিভিন্ন কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার করা হয়।
উত্তর: ডিজিটাল প্রযুক্তি বলতে এমন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে বিভিন্ন কাজকর্মে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যেমন- কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনযাত্রাকে সহজ ও উন্নততর করা হয়। আকাশ, জলপথ ও সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ করা, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা, টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে সভা-সেমিনার করা প্রভৃতি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে।
আবার পৃথিবীর দূর-দূরান্ত থেকে ই-লাইব্রেরির মাধ্যমে পড়াশোনা করা, রোগ নির্ণয় ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি সম্পাদনের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক কম্পিউটারইজড বা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
উত্তর: ই-সেবা বলতে সরকার কর্তৃক নাগরিকদের অনলাইনভিত্তিক প্রদত্ত সেবাকে বোঝায়। ই-সেবায় মূলত তথ্যপ্রযুক্তির (ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন) ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার নাগরিকদের সেবা প্রদান করে।
অর্থাৎ ই-সেবা দ্বারা সরকার জনগণের কাছে তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা অত্যন্ত দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে করে জনগণ ও সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ই-সেবার উদাহরণ হিসেবে অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি দলিলপত্র প্রাপ্তির জন্য নাগরিকের আবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে।
উত্তর: তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাকে দ্বিমুখী যোগাযোগ বলে। এ ব্যবস্থায় একাধিক প্রান্তের মাঝে যোগাযোগ করা সহজ হয়ে উঠেছে এবং সময়ও কম লাগে।
উত্তর: বিশেষভাবে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা দূর করা যায় বিধায় ই-গভর্নেন্স দুর্নীতিরোধে সহায়ক। ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থায় সরকার কোন কাজ কীভাবে করছে, কার মাধ্যমে করছে, আর্থিক লেনদেন কীভাবে হচ্ছে জনগণ সহজেই জানতে পারে। ফলে ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থায় সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা দূর হয়। এ কারণে দুর্নীতির পথ সংকীর্ণ হয় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে ই-গভর্নেন্স দুর্নীতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উত্তর: ই-গভর্নেন্সের নাগরিক সেবা অনলাইনভিত্তিক হয় বিধায় সহজেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। এভাবে ই- গভর্নেন্সের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা যায়। ই-গভর্নেন্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সকল সরকারি কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা।
সরকার কী করছে, কীভাবে করছে, আর্থিক লেনদেন কীভাবে হচ্ছে তা ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে জনগণ সহজেই জানতে পারে। তাছাড়া সমস্ত সরকারি কার্যক্রম ও নাগরিক সেবা অনলাইনভিত্তিক হয় বলে এতে দীর্ঘসূত্রিতা, অস্বচ্ছতা ঘুস ও স্বজনপ্রীতির সুযোগ কম। ফলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
উত্তর: ICT-এর পূর্ণরূপ হলো Information and Communication Technology (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি)। অল্প সময়ে, নির্ভুল তথ্যের আদান-প্রদান এবং দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারই হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
তথ্যপ্রযুক্তি ধারণাটি বহুমুখী ধারণার সাথে সম্পৃক্ত। রেডিও, টেলিভিশন, মুঠোফোন, কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার প্রভৃতি উপাদান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, মহাকাশ গবেষণা, গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে।
উত্তর: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন তথ্য ও সেবা জনগণের নিকট পৌছানোকেই ই-গভর্নেন্স বলে। ই-গভর্নেন্সের দুটি উদ্দেশ্য হলো- ১. সুশাসন প্রতিষ্ঠা। ২. সরকার পরিচালনা ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা আনায়ন করা।
উত্তর: অনলাইন যোগাযোগ বলতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগকে বোঝায়। প্রশাসনের অনেক কাজকর্মই আজকাল অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। যেমন- বিভিন্ন ভর্তির আবেদনপত্র, চাকরির আবেদনপত্র, আর্থিক লেনদেন, আয়কর জমা দেওয়া ইত্যাদি প্রশাসনিক তথ্যগুলো ইন্টারনেট ও অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে। ফলে জনগণ খুব সহজেই প্রশাসন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা জানতে পারে।
উত্তর: ই-গভর্নেন্সের সহায়তায় বিভিন্ন মতামত প্রদানের মাধ্যমে জনগণের শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করাকে ইলেকট্রনিক ডেমোক্রেসি বলে। একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রচলিত ধারায় গণভোট কিংবা সাধারণ নির্বাচনের সময় ব্যতীত জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত।
শাসনতান্ত্রিক বা অন্য কোনো ব্যবস্থায় জনগণের মতামত প্রকাশেরও কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ই-গভর্নেন্স ব্যবস্থায় যেকোনো বিষয়ে জনগণের মতামত চাওয়া যায়, জনগণও যেকোনো স্থানে থেকে এ বিষয়ে গঠনমূলক পরামর্শ দিতে পারেন। শাসনকার্যে জনগণের এরূপ অংশগ্রহণ করাকে Electronic Democracy বলা যেতে পারে।
উত্তর: বিশ্বায়নের যুগে নব্য অর্থনীতিকে সর্বজনীন ও সুফলধর্মী করতে হলে সুশিক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তিই সবচেয়ে বড় সহায়ক হতে পারে। বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক, বিমা সবক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারতা লাভ করছে। অতএব বলা যায়, নব্য অর্থনীতির বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকাই মুখ্য।
আশাকরি “ই-গভর্নেন্স ও সুশাসন – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায়” নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। পৌরনীতি ও সুশাসন এর সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।
Leave a Reply